Wednesday, November 18, 2020

এখনও ভুলিনি

প্রায় ১২ বছর আগের ঘটনা। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের সামনে একটা এটিএম কাউণ্টারের বাইরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের খুব কাছেই এটিএম কাউণ্টরটি। হয়ত এখনও রয়েছে। যাইহোক আমি কাউণ্টারের ভিতরে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছি না। ভিতর থেকে টাকা তুলে যে ব্যাক্তি বাইরে আসবে তার জন্য অপেক্ষা করছি।

অবশেষে তিনি বাইরে এলেন। এলেন বলা ভুল হল- এল। বেরিয়ে আমার দিকে তাকাল। হাসল। আমিও হাসলাম। নিজেই এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরল। আমি তখন আনন্দে আত্মহারা। রোশনি নিজে থেকে আমার হাত ধরেছে। আমি ভাবতেই পারছিনা। আমি আবার তাকালাম রোশনির দিকে। হাতের তালু একটু রুক্ষ, খসখসে হওয়া স্বতেও আমার ভালো লাগছিল। মেট্রোতে উঠলাম, একে-অপরের হাত ধরে। মাস্টারদা সূর্যসেন স্টেশনে রোশনি নেমে গেল। নেমে যাওয়ার আগে বলে গেল, ‘কাল আমার জন্য অপেক্ষা করিস গড়িয়াতে। দুজনে একসাথে যাব’। আমি বললাম ‘ঠিক আছে’।

আমি আর রোশনি একই অফিসে কাজ করতাম। অফিসেই আলাপ। আমি রোশনিকে পছন্দ করতাম এবং তা রোশনিকে জানিয়েও ছিলাম। ও প্রথমে আমার প্রস্তাব নাকচ করে দিলেও, আমার ধারনা পরবর্তীতে রোশনি সেনগুপ্ত আমার প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। সেইদিনের হাত ধরা আমার ধারনাকে সঠিক প্রমান করে।

পরেরদিন আমাদের, অফিসের সকলের, এক জায়গায় নিমন্ত্রন ছিল। আমাদেরই এক অফিস কলিগের বিয়ে ছিল। রোশনি ঠিক করে, আমরা দুজনে একসাথে যাব। ওর কথা মতন আমি গড়িয়াতে গিয়ে উপস্থিত হই। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর রোশনি এসে উপস্থিত হয়। আমি দেরি হওয়ার কারন জানতে চাইলে আমায় পাল্টা প্রশ্ন করে ‘আমায় দেখতে কেমন লাগছে?’ আমি উত্তরে কিছু জানাই না। বেশি কথা হয়না যাওয়ার পথে।

বিয়ে বাড়িতে পৌঁছেই সব কিছু পালটে যায়। আমাকে পাত্তাই দিতে থাকে না একপ্রকার। কথা বলতে চাইলেই এড়িয়ে যেতে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝেই ঘুরে একবার দেখে নিতে থাকে। যাকে ‘ঝারি মারা’ বলে। দুজনে আলাদা আলাদা লোকের সাথে কথা বললেও চোখ একে অপরের দিকে। কিন্তু যেই আমি কথা বলা শুরু করতে যাচ্ছি, তখনই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।

আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই অফিসের বাকি লোকেদের সাথে কথা বলতে শুরু করি। কিন্তু খানিক বাদেই রোশনি আমার কাছে এসে বলে, ‘বিয়ে শুরু হয়েছে। দেখবি না?’ আমি প্রায় চাবি দেওয়া পুতুলের মতন ওর সাথে চলে গেলাম বিয়ে দেখতে। আমি বিয়ে দেখতে থাকি আর রোশনির একটা ফোন আসে। ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে চলে যায়। আমি ভাবতে থাকি কোথায় গেল?

১০ মিনিট পর আমার মোবাইলে ফোন আসে। আমাকে নিচে যেতে বলে (বিয়েটা একটা হোটেলের দুই-তলায় হচ্ছিলো)। আমিও যাই। গিয়ে দেখতে পাই রোশনি একটি ছেলের সাথে কথা বলছে। আমি এগিয়ে যাই। আমাকে দেখে রোশনি ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘এটা বিপ্লব। আমারা এক অফিসে কাজ করি’। আমি হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করি ছেলেটার সাথে। এরপর রোশনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এটা ত্রৈলোক্য। আমার বয়ফ্রেন্ড’। 

No comments:

Post a Comment